Saturday, May 18, 2013

এসইও জন্য ব্লগিং নাকি ফ্রিল্যান্সিং? কোনদিকে যাবেন?

মূল লেখক : সজীব রহমান।

আসসালামুয়ালাইকুম ।  সবাই ভালো আছেন নিশ্চই। আজ আমি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম ব্লগিং ও ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু বিষয় শেয়ার করবো। কোনটি আসলে বেশি ভালো, কোন পথে আয়ের পরিমান বেশি এসব নিয়েই সাজিয়েছি আজকের আমার টিউন। তো শুরু করা যাক।

ব্লগিং ও ফ্রিল্যান্সিং কি?

আমার অনেকেই জানি এদের সংজ্ঞা । তারপরও আমি আমার আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ব্লগিং বলতে বুঝায় এমন একটি কাজ যার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে লেখা লেখি করা। অর্থাৎ আপনি যদি এখন ব্লগার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাজ হবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা বা লেখালেখি করা। সেটা হতে পারে যে কোন বিষয়। আর এসব বিষয় নিয়ে যারা লেখালেখি করে তারাই ব্লগার (যদি ও আজকের প্রেক্ষাপটে ব্লগার মানেই নাস্তিক  :D :P ) । তার মানে দাঁড়াচ্ছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে একজন ব্লগার লেখালেখির কাজই হল ব্লগিং

ফ্রিল্যান্সিং মানে এক কথায় অনের হয়ে স্বাধীন ভাবে কাজ করা। যারা কোন একটি বিষয়ের উপর দক্ষ এবং সেই কাজের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন আউটসোরসিং মার্কেট প্লেস এ সেই বিষয়ের উপর কাজ করে থাকে সেটাই ফ্রিল্যান্সিং। অর্থাৎ তাঁরা মুক্তপেশাজীবী । তাঁরা চলে সম্পূর্ণ নিয়ের ইচ্ছায়। আর যারা ফ্রিল্যান্সিং করেন তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার।
এসইও তে ব্লগিং ও ফ্রিল্যান্সিং এর গুরুত্ব।
এতক্ষণে আমরা বুঝতে পরেছি যে ব্লগিং ও ফ্রিল্যান্সিং কি? এখন আসি আমার মূল বিষয়ে। “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন” এই বিষয়ের উপর কোনটির বেশি গুরুত্ব রয়েছে।
এখনকার সময়ে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস গুলতে প্রচুর পরিমাণে কাজ রয়েছে এসইও এর। তাই এখন ভালো সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনকারী বেশ কাজ পেয়ে থাকেন সেখান থেকে। তবে তুলনা মূলক ভাবে তা আগের চেয়ে কম। (কারণ হিসাবে আসতে পারে গুগল পাণ্ডা এবং পেঙ্গুইন আপডেট। যার কারনে এখন প্রতিটি ক্লায়েন্ট চায় ভালোমানের সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজারদের। এখন আর সেই দিন নেই যে লাখ লাখ লিংক বিল্ডিং করে দিলেন আর ২ দিনেই র‍্যাংক আপ হয়ে গেলো। এখন কোয়ালিটির চেয়ে কোয়ান্টিটি সবচেয়ে বড় ব্যাপার। আর সেই কারণে যারা শুধুমাত্র লিংক বিল্ডিং এর কাজ করতেন তাঁরা অনেকেই ঝড়ে পড়েছেন। আর যারা একটু এডভান্স লেভেল এ রয়েছেন তাঁরা বেশ ভালো পজিশন এ রয়েছেন ফ্রিল্যান্সিং প্লাটফরম গুলতে। তাছারা এখন লিংক বিল্ডিং এর কাজের চেয়ে র‍্যাংক আপ এর কাজের পরিমাণ বেশি। তাই বলা চলে যে শুধুমাত্র যারা লিংক বিল্ডিং জানেন তাঁদের জন্য ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম অনেকাংশে দুর্বল। আর যারা মোটামুটি অন পেজ এবং অফ পেজ সাথে একটু ওয়েবসাইট ডিজাইন ভালো যানেন তাঁদের জন্য রয়েছে বিস্তর সম্ভাবনা।


অন্যদিকে একজন ব্লগার কিন্তু সব বিষয়েই পারদর্শী হয়ে থাকেন। যেমন তিনি পারেন লিখতে, পারেন তিনি ওয়েবসাইট বানাতে, সুন্দর করে সব গোছাতে। আর তার সাথে যদি তিনি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন জানেন তাহলে তো কোন কথাই নেই। যে কোন ফরম্যাট এ তিনি কাজ করতে পারেন। যেমন একজন ব্লগার কিন্তু অ্যাফিলিয়েট করতে পারেন, গুগল এডসেন্স এর মাধ্যমে আয় করতে পারেন, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং এর জন্য কাজ করতে পারেন, এমন কি তিনি ফ্রিল্যান্সিং ও করতে পারেন!


তার মানে কি দাড়ায়??


“সকল ব্লগারই ফ্রিল্যান্সার, কিন্তু সকল ফ্রিল্যান্সারা ব্লগার নয়” 

তার মানে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এ ব্লগিং এর গুরুত্ব ফ্রিল্যান্সিং এর চেয়ে অনেক বেশি। এসইও এর অনেক পার্ট রয়েছে, তাই শুধুমাত্র একটি বিষয় জানলে হবে না, জানতে হবে সম্পূর্ণ বিষয়।

অনলাইন ক্যারিয়ার ও ব্লগিং –ফ্রিল্যান্সিং

এবার আসি ক্যারিয়ার হিসাবে ব্লগিং কেমন আর ফ্রিল্যান্সিং কেমন। প্রথমে আসি ফ্রিল্যান্সিং এর দিকে

ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার

ফ্রিল্যান্সিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। এখানে দিন দিন যেমন ওয়ার্কার এর সংখ্যা বাড়ছে, ঠিক তেমন ভাবে কাজের পরিমাণ ও বাড়ছে। ফলে এটা ভাবার অবকাশ নেই যে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন জানলেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না। আপনি অবশ্যই পারবেন। এবং আমাদের দেশের অনেকেই আছেন যারা ওডেক্স এ এখন ৫,০০০-১০,০০০ ঘন্টা কাজ করেছেন শুধুমাত্র এসইও এর উপর। এবং প্রতিনয়ত নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সারা আসছেন এই কাজে নিজের ক্যারিয়ার হিসাবে গড়ে নিতে। মূলত সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন শেখার পর ফ্রিল্যান্সিং এ কাজ করার মাধ্যমে নিজেদের আরো শক্ত করে গড়ে তোলায় ফ্রিল্যান্সিং এর কোন জুড়ি নেই। অজানা অনেক কিছুই আপনি জানতে পারবেন ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে।

 নিজে কাজ করে বা একটি শক্ত টিম গঠন করে আপনি ও পারেন আপনার নিজের ক্যারিয়ার গড়তে এই ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে। আজ আমাদের পাশের দেশে ইন্ডিয়াতে কিন্তু একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে আউটসোর্সিং। চাইলেই আমরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্র থেকে হয়ে উঠতে পারি উদ্যোগতা।


ব্লগিং ক্যারিয়ারঃ

ব্লগিং হল ফ্রিল্যান্সিং এর চেয়েও স্বাধীন একটি মাধ্যম নিজের ক্যারিয়ার গড়ার। আসলে এই প্ল্যাটফরম দিয়ে আপনি একটি সুদূর প্রসারী অনলাইন ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। যেহেতু একজন ব্লগার পারেন লেখালিখি করতে তাই তিনি নিজে ওয়েবসাইট বানিয়ে তা দিয়েই শুরু করতে পারেন আয়। যেমন তিনি একটি বড় রিভিউ সাইট করলেন , যেখানে তিনি পারেন বিভিন্ন পণ্য নিয়ে লিখতে এবং সাথে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন করে তা নিয়ে আসতে পারেন সার্চ ইঞ্জিনের শীর্ষে। ফলে সেই ব্লগ বা ওয়েবসাইট দিয়ে তিনি শুরু করতে পারেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, যেখানে তার রেফারালে যদি কেউ কোন পণ্য নিয়ে থাকেন তাহলে তিনি পান একটি কমিশন , এভাবে তিনি ভালো একটি আয়ের বা ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।

 অন্যদিকে তিনি ঐ একই সাইট এ গুগল এডসেন্স দিয়েও আয় করতে পারেন, যত বেশি ভিজিটর আসবে তার ওয়েবসাইট এ ততো বেশি আয় এর সম্ভবনা বেড়ে যাবে। এভাবে বিভিন্ন মাধ্যমে একজন ব্লগার আয় করতে পারেন, যা একজন ফ্রিল্যান্সার এর পক্ষে সম্ভব হয় না। আর এই কারনে ফ্রিল্যান্সিং এর চেয়ে ব্লগিং এ ক্যারিয়ার যেমন মজবুত তেমন বেশি লাভবান।

কেন আমি ব্লগিং করি, ফ্রিল্যান্সিং নয়?

অনেকে আমাকে প্রশ্ন করে ভাই আপানার ওডেক্স এ আওয়ার কত? ভাই আপনি কি এসইও কাজ করেন ফ্রিল্যান্সার ডট কমে ? আমি বলি না আমি কোন এসইও এর কাজ মার্কেটপ্লেস গুলতে করি না। অনেকেই অবাক হন আমার কথা শুনে, কারণ এখন ফ্রিল্যান্সিং মানেই ক্রেজ, আর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন জেনে যারা ফ্রিল্যান্সিং করে থাকেন তাঁরা যে কি কি সুযোগ গুলো হাতছাড়া করেন তা এখন আমি আপনদের সামনে তুলে ধরবো।

 ধরুন আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার। ওডেক্স এ একটি কাজ পেলেন ব্যাকলিংক বিল্ডিং এর। রেট ১০০ ডলার। আচ্ছা, যে সাইটের জন্য আপনি লিংক বিল্ডিং করছেন সেটি একটা হেলথ বিষয়ক ওয়েবসাইট। 
 আপনাকে বায়ার বলল যে আমাকে ১০০০ ব্যাকলিংক করে দিতে হবে, তাহলে এর জন্য নিশ্চই আপনার ৭-১৫ দিন সময় লাগতে পারে। তা ছাড়া যে নীতিমালা আপনাকে বায়ার দিবে তা দিয়ে কাজটি হয়তো করতেও আপানার বেশ বেগ পোহাতে হবে, এর পর বায়ের সাথে যোগাযোগ, পেমেন্ট নিয়ে ঝামেলা ইত্যাদিতো রয়েছেই। এত কিছু করার পরেও আপনি কিন্তু কাজটি শেষ করে দিলে জাস্ট একবারই ১০০ ডলার পেলেন। কিন্তু বায়ার আপনাকে দিয়ে অনেক বেশি ডলার আয় করে নিলো।

কিভাবে? তাহলে শুনুন । বায়ার যে সাইট আপনাকে দিয়ে রেংকিং করিয়ে নিল সেই সাইটে সে যদি প্রতিমাসে ৩০০০০ ভিজিটর আসে এবং সেই সাইট এ যদি সে অ্যাফিলিয়েট করে তাহলে সেখান থেকে যদি মাত্র ১০০ জন ভিজিটর ও যদি তার প্রোডাক্ট কিনে থাকে তাহলে তার আয় কত হবে জানেন? ধরলাম প্রোডাক্ট প্রতি তার কমিশন ২৫ ডলার, অর্থাৎ ১০০X২৫= ২৫০০ ডলার!!! কিন্তু সে আপনাকে দিয়ে রেংক আপ করানর জন্য খরচ করলো কত? মাত্র ১০০ ডলার, হয়তো অন্য কাউকে দিয়ে সাইট ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদিতে তার খরচ সর্বচ্চো ৫০০ ডলার। কিন্তু রেংক আপ এর পর থেকে সে প্রতিমাসে আয় করবে ২৫০০ ডলার, তাহলে সে যদি নুনতম ৬ মাস তার ওয়েবসাইট চালায় তাহলে তার টোটাল আয় হয় ১৫,০০০ ডলার !! 

তাহলে একবার ভাবুন সে তার ৫০০ ডলারকে কিভাবে ১৫ হাজার ডলার এ রূপান্তর করেছে। শুধু এফিলিয়েট মার্কেটিং নয়, সে যদি তার সাইট এ গুগল এডসেন্স ও বসায় তাহলে তার ঐ ৩০,০০০ ভিজিটর দিয়ে তার আয় হতে পারে মাসে ৫০০-১৫০০ ডলার পর্যন্ত। কিন্তু এই সব আপনি মিস করবেন কারণ?? আপনি শুধুমাত্র একজন ফ্রিল্যান্সার।

আজ আপনি যদি ব্লগিং করতেন তাহলে কি হতো? আপনার র্যাংলক আপ করার জন্য অন্য কাউকে হায়ার করা লাগত না, আপনি নিজেই আর্টিকেল লিখতে পারতেন, না পারলে ও অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে, নিজে সাইট রেডি করতে পারতেন, এবং এর পিছনে আপনি যদি ২-৩ মাস পরিশ্রম করতে তাহলে আপনি ঠিক ঐ বায়ার যা ইনকাম করছে আপনি তাই করতে পারতেন। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সার কখনই একটি প্রোজেক্ট এর মাধ্যমে প্রতিমাসে মাসে এভাবে ইনকাম করতে পারতেন না। 

আর এই কারনেই আমি নিজে মনে করি ফ্রিল্যান্সিং এ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর কাজ করা চরম বোকামি। আপনি যদি ওয়েবসাইট রেংক আপ করাতেই পারেন তাহলে কেন অন্যদের ওয়েবসাইট আপনি রেংক আপ করাবেন? কেন অন্যের জমিতে ফসল ফলিয়ে শুধুমাত্র পারিশ্রমিক নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন? আপনি যদি নিজেই চাষ করতে পারেন তাহলে ফল, ফসল সবই আপনার এবং আমার পরিশ্রমের যে আসল সম্মান সেটা আপনি পাবেন।

তাই আমি মনে করি আপনি যদি সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর এডভান্স লেভেল এর কাজ শিখতে পারেন তাহলে ব্লগিং বা অনলাইন মার্কেটিং কেই বেছে নিতে পারেন আপনার ক্যারিয়ার হিসাবে। আর এখন যারা বিগেনার পর্যায়ে রয়েছেন আপনারা ও প্রস্তুতি নিতে থাকেন এডভান্স কিছু শেখার জন্য। কারণ এডভান্স এসইও না জানলে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব নয়। তাই সময় নিয়ে নিজেকে গুছিয়ে ফেলুন এবং কাজ শিখতে শুরু করুন। আপনার ক্যারিয়ার শুরু হোক ফ্রিল্যান্সিং দিয়ে কিন্তু সব সময় টার্গেট রাখুন অনলাইন মার্কেটিং এ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে।এর জন্য প্রয়োজন সময়, প্রশিক্ষণ, শ্রম এবং ধৈর্য। আশা করি এই টিউন আপনাদের উপকারে আসবে।

No comments:

Post a Comment